হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ:
মৌসুমী নিম্নচাপের প্রভাবে রবিবার ভোররাত থেকে টানা বৃষ্টিপাত ও পূর্ণিমার জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় টেকনাফের ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। টেকনাফে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমী নিম্নচাপের পাশাপাশি সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। আরও কয়েকদিন বৃষ্টিপাত এবং জোয়ারের পানির উচ্চতা এক-তিন ফুট বেড়ে যেতে পারে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত সাগরের সব নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায় ২০১২ সালের ২২ জুলাই শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিমপাড়া অংশ ২ দশমিক ৬৪৫ কিলোমিটার এবং গত ৩০ মে ঘুর্ণিঝড় মোরার আঘাতে নাফনদীর ৬৮ নম্বর ফোল্ডারের ৩নং স্লইস গেইট সাবরাং উপকূলীয় বেড়িবাঁধের অংশ দুটি ভেঙে যায়। ওই খোলা দুটি অংশ দিয়ে এলাকাগুলো প্লাবিত হচ্ছে। নাফনদী ৬৮ নম্বর ফোল্ডারের ৩নং স্লইস গেইট সাবরাং ও বঙ্গোপসাগরের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া দুটি ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকছে। এতে ১৩টি গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের মগপাড়া, পানছড়িপাড়া, মন্ডলপাড়া, লেজিরপাড়া, আছারবনিয়া, ডেগিল্লার বিল, ঝিনাপাড়া, শাহপরীরদ্বীপের মাঝেরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, ডাঙ্গরপাড়া, জালিয়াপাড়া, ক্যাম্পপাড়া গ্রাম প্লাবিত হয়ে বসতবাড়ি, পানের বরজ, সবজি ক্ষেত, সুপারী বাগান ও চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।
শাহপরীরদ্বীপ জালিয়াপাড়া বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম জানান শাহপরীরদ্বীপের নাফ নদীর বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে হাজার হাজার একর লবনের মাঠ ও ফসলী জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে পূর্বের নাফ নদীর বেড়িবাঁধ মেরামত করা না হলে এ বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। আছারবনিয়ার গ্রামের আবদুল আজিজ মগপাড়ার আলী আহমদ ও মাঝেরপাড়ার মরিয়ম খাতুন আক্ষেপ করে বলেন ‘২০১২ সালে জোয়ারের তোড়ে বাধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর মেরামত না করায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে পানি নিয়ে যুদ্ধ করছি। এ রোজার মাসে সারাদিন রোজা রেখে বসত ঘরে পানি ঢুকে প্লাবিত হলে কি ভোগান্তি পোহাতে হয়, সেটা ভোক্তভুগী ছাড়া আর কেহ বুঝতে পারে না। মন্ত্রী-এমপিরা তো এসি রুমে ঘুমান। আমাদের মতো মানুষের কি ভোগান্তি সেটা তো তাঁরা জানেননা। তাঁদের প্রতি অনুরোধ মাত্র একটি দিন আমাদের সঙ্গে কাটান, তারপর বুঝা যাবে কত ধানে কত চাল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেকনাফ অঞ্চলের উপ-প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন উপকূলীয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পূর্ণিমা জোয়ারের পানি প্রবেশ করে সাবরাং ইউনিয়নের ১৩ গ্রাম হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামত করার উদ্যোগ নেয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান বেড়িবাঁধের খোলা অংশ দু’টি কিছু দিনের মধ্যে মেরামত করা হবে। ভাঙা অংশ ও খাল দিয়ে যেন সাগরের পানি ঢুকতে না পারে সেজন্য জিও ব্যাগ ও পাথর ফেলে পানি প্রবেশ বন্ধ করা হবে।
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ শফিক মিয়া বলেন নাফনদীর ৬৮ নং ফোল্ডারের ২নং স্লইস গেইট ও পুটখালী খাল সংলগ্ন এলাকা বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে ওই এলাকা মেরামত করা না হলে এ বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।